Thursday, December 22, 2011

বাবার ওষুধ



অফিস থেকে বের হওয়ার আগেই ঠিক করলাম, আজ যে করেই হোক বাবার ওষুধটা কিনতে হবে। গত দুই দিন হলো বাবা বলেছেন, কিন্তু কাজের চাপে মনেই থাকে না। আজ সবার আগে ওষুধটা কিনতেই হবে। এই ভাবতে ভাবতে যখন বের হচ্ছি, হঠাৎ মুঠোফোনটা বেজে উঠল। দেখি, বউ ফোন করেছে। ফোন ধরতেই বলল, অফিস থেকে বের হয়েছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। বউ বলল, শোনো, আব্বা-আম্মা আর লিলি এসেছে। আজ রাতে বাসায় খাবে। তুমি ইলিশ মাছ নিয়ে এসো। শ্বশুর-শাশুড়ি আসায় খুব যে খুশি হয়েছি, তা বলা যাবে না। তবে শ্যালিকার ব্যাপারটা আলাদা। তাই অনেকটা লিলির কথা ভেবেই পকেটে হাত দিলাম। ভালো টাকা আছে মানিব্যাগে। যদিও বাজার করতে আমার কখনোই ভালো লাগে না, মাছওয়ালাদের সঙ্গে খিটমিট তো আরও অসহ্যকর। তবুও উৎসাহ নিয়েই একটা ইলিশ মাছ কিনে ফেললাম। কাঁচাবাজারের পাশেই নিউমার্কেট। ভাবলাম, লিলির জন্য কিছু একটা কেনা উচিত। মাছটা বাজারে রেখে নিউমার্কেটে গেলাম। অনেক খুঁজে একটা মেকআপ বক্স কিনে ফেললাম। কিন্তু এর পরই একটা অস্বস্তি লাগা শুরু করল। শুধু লিলিকে দেওয়াটা কেমন দেখায়। একটু ভেবে বউয়ের জন্যও একটা ড্রেস কিনে ফেললাম। অনেক দিন ওকে সারপ্রাইজ দেওয়া হয় না। আজকের ড্রেসটা পেয়ে ও নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে। ভাবতেই তৃপ্তির একটা হাসি মেলে গেল আমার মুখে। ভাবলাম, সবার জন্যই তো হলো। আমার পিচ্চি মেয়েটার জন্য কিছু না নিলে ও ভীষণ রাগ করবে। তাই ওর জন্য একটা স্কুলব্যাগ কিনে ফেললাম। কাঁচাবাজারে ফেরার সময় ম্যানিবাগটা আরেকবার দেখলাম, এখনো ১৫০ টাকা আছে। নাহ্, বাবার ওষুধ হয়ে যাবে। ১৫০ টাকাই তো লাগবে। কিন্তু মাছটা হাতে নেওয়ার পর নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হলো। বাবার ওষুধ কিনে হেঁটে বাসায় যাওয়া সম্ভব নয়। আবার ৩০ টাকা রিকশাভাড়া দিলে বাবার ওষুধও কেনা যাবে না। কী করব ভেবে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর সব দ্বিধা ঝেড়ে ডেকে উঠলাম, এই রিকশা...।

No comments:

Post a Comment